Rose Good Luck ভালবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১২) Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:০৫:১১ বিকাল



Good Luckবিউস।

বিকালের আড্ডায়।

আটজনের টেবিলে ইতোমধ্যেই পাঁচজন উপস্থিত। আলাপ হচ্ছে। বিষয় রেখা'র একটা লেখা।স্কুলের বাচ্চাদের মজার মজার সব কান্ড নিয়ে। গতকাল সবাইকে পড়তে দিয়ে গেছে। পাশে লতার একটা লেখা।

একজন রেখার লেখাটা টেনে নিল।

রেখার লেখার ধরণ সরল। কেউ কেউ প্রশংসা করল। কথা চলতে চলতে রেখার ব্যক্তিগত জীবন পর্যন্ত গড়াল।

আজকাল রেখা মাঝে মাঝে বিউস আড্ডায় আসে। মিনার মাহমুদ খুশি হন কিনা বোঝা যায় না। লতার অস্বস্তিটা কেউ কেউ খেয়াল করেছে। রেখা থাকলে লতা প্রায়ই কোন ছুতায় চলে যায়।

রেখার লেখাটার দিকে তাকিয়ে টেবিলের মাঝামাঝিতে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা পীযূষ হঠাৎ বলে বসল - 'এত সুন্দরী এত ভাল বউ পেলে আর কারো চিন্তা করা আমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হত না'

টেবিলের এক কোণায় বসা মিতার কাছ থেকে উত্তর আসল, ' কী জানি! '

কে যেন বলল, ' মিসেস মাহমুদ শুরু থেকেই আড্ডায় থাকলে হয়ত.. '

সবাই হাসল।

একজন বলল, 'ভাগ্য বলে একটা ব্যাপার আছে। সবকিছু কাজ দিয়ে হয় না। তা ছাড়া কে কেন কী করে তা বাইরে থেকে জানা সম্ভব না।'

মিতা আবার মুখ খুলল,

' বিশ্বাস আর বিশ্বস্ততা না থাকলে ঘর সংসার বিয়ের আর মানে কী? '

অবিবাহিতদের মধ্যে একজন বলল, ' আমি এক যাযাবর.. বাবা, বিয়েশাদী করব না। ভাল আছি। আমার মা আরো একশ' বছর বাঁচুক.. '

সবাই হেসে উঠল।

হাসির আড়ালে কারো কারো নিজেদের জন্য, নিজেদের বর্তমান বা ভবিষ্যত সম্পর্কগুলির জন্য দুশ্চিন্তা হল।

মিনার মাহমুদ আসার সাথে সাথে আড্ডার প্রসংগ ঘুরে গেল।

আজ রেখা আসেনি। লতা দুপুরে লেখা রেখে গেছে। আজ আর আসবেনা জানিয়ে গেছে। আড্ডা প্রসংগ থেকে প্রসংগান্তরে যেতে থাকলো। সন্ধ্যা গিয়ে রাত নামল।

লতার লেখার সমালোচনা শুনতে শুনতে আড্ডার হুলুস্থুলের ভিতরে বসে মিনার মাহমুদের মনে একটা ভাবনা উকি দিয়ে গেল-

'লতা কি সহজে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য আমাকে সিড়ি হিসাবে ব্যবহার করল?

... ... ...

এই রেস্টুরেন্টটাতে ওরা আগেও কয়েকবার এসেছে। একটু অন্ধকার। টেবিলটা এক কোণায়। লোকের চোখের আড়ালে। কেবিন না। কাঠের স্ট্যান্ডের উপর দাঁড় করানো একটা পিসবোর্ডে গাছের ছালের নকশা - ওটা টেবিলের সামনে। টেবিলের একপাশে পাশাপাশি চেয়ার দুটো অন্যদের চোখে পড়ে না।

খাবার এখনো আসেনি। পরিষ্কার দুটো কাচের গ্লাস। গ্লাসে টিস্যু পেপার। একপাশে মশলা আর লবণের এক স্ট্যান্ডে ঢাকনিওয়ালা জোড় বাটি। বাটি থেকে ছোট্ট দুটো চামচের হাতল বের হয়ে আছে।

'কিউট!'

চেয়ারে বসা লতা ভাবল। পাশে বসা মিনার মাহমুদ অন্যমনষ্ক।

একটু পর -

লতা তার আনমনাভাব না দেখার ভান করে কথা বলে যাচ্ছিল। ভিতরে ভিতরে আহত হলেও বাইরে খুব বোঝা যাচ্ছিল না। তবু কেউ খেয়াল করলে দেখতো - লতার চোখ সামান্য লাল। চোখের কিনারায় পানি। লিপস্টিকে সাজানো ঠোটের দুই পাশে কান্নার হালকা ভাজ।

লতা হেসে জিজ্ঞেস করল, ' মন খারাপ? '

লেখক নিজের ভিতর ডুবে থেকেই বললেন,

' না'।

আসলে তিনি প্রশ্নটা কী তা খেয়ালই করেন নি। এরপর লতা যা কিছুই বলল লেখক খুব অস্পষ্ট স্বরে কখনো না, কখনো হ্যা বলে গেলেন কিছু খেয়াল না করেই।

খেতে খেতেও লেখক ভাবতেই থাকলেন। লতা শেষ পর্যন্ত ব্যাগ তুলে নিয়ে সৌজন্যমূলক বিদায় শুভেচ্ছা জানাল।

লেখক ওকে দাঁড় করিয়ে বিল মিটিয়ে লতার সাথেই বের হয়ে আসলেন।

লতাকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে বিদায় দেবার আগে হঠাৎ জানতে চাইলেন, ' তুমি আমার সম্পর্কে কী ভাবো? '

লতা হাসল, ' ভাল কিছু। আপনি আমার সম্পর্কে কী ভাবেন? '

লেখক কোন উত্তর দিলেন না। বিদায় নিলেন।

ট্যাক্সি চলে গেল। লেখক তাকিয়ে দেখলেন না। লতা ট্যাক্সির পিছনের জানালার পর্দা সরিয়ে দেখল - লেখক মাথা নিচু করে হেটে যাচ্ছেন। কেমন মন-ভাংগা একজন মানুষের মত।

লতার ভিতরটা হু হু করে উঠল। তবু দুরত্ব তার মমতার চেয়ে দ্রুত বেড়ে চলল।

সামিয়া রেখার সেই স্কুল জীবন থেকে সব সুখ দু:খের অংশীদার। এবার সে বেশ অনেকদিন পর এসেছে।

ছুটির দিনের সকালটা নানা রকম রান্নায় ব্যস্ত থাকল রেখা। সামিয়া কাজে হাত লাগাল। দুপুর দুটোর মধ্যে টেবিল ভরে গেল নানান রং, সুগন্ধ আর স্বাদে। আজ মিনার মাহমুদ কোন সংবর্ধনায় গেছেন। বান্ধবীকে পেয়ে রেখা বাসায় থেকে গেছে।

দুপুরে খাওয়ার পর বিছানায় আধশোয়া হয়ে পাশাপাশি বসে অলস আলাপে মন দিলো দুই বান্ধবী।

গল্পের ফাঁকে ফাঁকে বান্ধবীর মুখের দিকে তাকাচ্ছিল সামিয়া। একটু দ্বিধা নিয়ে শেষে এক সময় বলল, ' কয়েকদিন আগে এক মহিলা আমার কাছে এসেছিল একটা নতুন বাচ্চা নিয়ে। বাচ্চাটা ওর দরজায় কে যেন রেখে গেছে। ফুটফুটে মেয়েটা। একটু দুর্বল। চোখগুলি বড় বড়। অনেক পাপড়ি। ফর্সা। আমার কাছে আছে। সপ্তাহখানেক হল। আমার ছেলেরা ওকে পেয়ে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।'

রেখার মুখটা সাদাটে হয়ে গেল। চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পর আস্তে বলল,' মিনার যদি কষ্ট পায়? '

সামিয়া বান্ধবীকে একটু সময় দিল। তারপর সমস্যার ভিতরটা দেখাল বান্ধবীকে।

'এভাবে থাকলে খারাপ লাগাটা সারাক্ষণ থেকে যাবে। উনার স্বাস্থ্য দেখলাম অনেক খারাপ হয়ে গেছে। তোকেও দুর্বল দেখাচ্ছে। একবার ফেইস করে ফেল। নেহায়েত রিয়্যাক্ট করলে জোর করার কিছু নাই। আমার তো মেয়ে নাই। আমি রেখে দেব।'

সেই রাতটা রেখা ঘুমাতে পারল না। স্বামীকেও কিছু বলতে পারল না।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়ার আগে স্বামীর মুখের দিকে তাকাল। জানালা দিয়ে আসা আলো ফ্লোরে পড়ে সারা ঘর আলো হয়ে আছে। মানুষটার ফর্সা মুখটা বাচ্চা ছেলের মুখের মত মায়াভরা। সে অপলক তাকিয়ে রইল।

নিষ্পাপ মুখটার চোখের নিচে কালি দেখে রেখার মনে আবেগ ভরা নদীর বান জাগাল। যে কোন অবস্থায় সে তার স্বামীর সাথে থাকতে চায়। তাকে সুখী দেখতে চায়। আর কাউকে সে তার মানুষের ভাগ দিতে পারবে না। কিছুতেই তাকে ফেলে যেতেও পারবে না। আর কারো সাথে জীবন কাটানোর চিন্তাও সে করতে পারে না।

এত বছরের সংগী! পরম মমতায় দুই হাতে স্বামীর মুখটা বুকে নিয়ে বসে থাকে। সকালের আলোয় রেখার মুখ উজ্জ্বল। সে সিদ্ধান্ত নেয়, বাচ্চাটার কথা স্বামীকে বলবে। ঘুম ভেংগে রেখার আদরটুকু লেখককে বিয়ের সেই প্রথম সময়টাতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

....

নাশতার টেবিলে স্ত্রীর মুখে বাচ্চাটার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সকালটা মনে পড়ল। ব্যথা আর শান্তি একসাথে অনুভব করলেন।

মন দিয়ে অনুভব করলেন স্ত্রীর মনে সন্তান না পাওয়ার গভীর বেদনা। আবিষ্কার করলেন, সন্তানের জন্য প্রকৃতি তার স্ত্রীর মনে যে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছে তা অবলম্বন না পেয়ে লেখককেই আঁকড়ে লতিয়ে উঠেছে!

নতুন বাচ্চাটা এলে তার সেই আদর ভাগাভাগি হবে জেনেও তিনি সস্নেহে স্ত্রীর ইচ্ছায় সম্মতি দিলেন।

অলক্ষ্যে লতার মুখটা কি লেখকের মনে ভেসে উঠল? চিনচিনে একটা ব্যথা?

নাশতা শেষে লেখক ঘর থেকে বের হবার আগে স্ত্রীর মুখ ছুঁয়ে আদর করে হাসলেন, ' নতুন মানুষ পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে নাতো? ' Rose Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

৮৯৬ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

278067
২৫ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫১
ক্ষনিকের যাত্রী লিখেছেন : এর আগের ১১পর্ব গুলো পড়া হয়নি। সময় হলে পড়ে নেবো সব ইনশাআল্লাহ। Happy Rose Rose Good Luck Good Luck
২৫ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৬
221869
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে। ইনশা আল্লাহ পড়ে নিয়েন।
অনুভূতি রেখে আমাকে ধন্য করলেন। অনেক ভালো লাগল।
শুভেচ্ছা রইলো।Good Luck Good Luck
278074
২৫ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : চালিয়ে যান আপন গতিতে..........আর আনন্দ বিলিয়ে যান সবার মাঝে!
২৫ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৮
221870
মামুন লিখেছেন : প্রতিটি পর্বে এবং আমার লিখাগুলোতে আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহপাক আপনাকে এর বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান দান করুন-আমীন।
আল্লাহপাক আপনাকে সবসময় ভালো রাখুন-আমীন।Good Luck Good Luck
278133
২৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৫৬
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৮
221984
মামুন লিখেছেন : ভালোলাগার অনুভূতিতে সিক্ত করলেন আমায়, অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য পাঠিয়ে দিলাম।Good Luck Good Luck
278163
২৬ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:০৩
কাহাফ লিখেছেন :
নিস্তব্ধতার বেড়ি বাধে আছড়ে আছড়ে পড়ে সরবের শীর্ণকায় স্রোতধারা।চিনচিনে একটা ব্যথা থেকে থেকে যায়!
নতুন মানুষ পেলেই ভূলে যেতে হয় কাউকে......!!!
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৫:০৪
221965
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : কাহাফ ভাই আপনার মন্তব্যগুলো মামুন ভাইয়ের লেখার মতই মনোমুগ্ধকর। আপনিও চেস্টা করলে ভাল সাহিত্য লিখতে পারেন।
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০৯
221985
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ কাহাফ ভাই মন্তব্যের জন্য। শুভকামনা রইলো নিরন্তর।
আর বৃত্তের বাইরে বোনের কথার সাথে আমিও একমত কাহাফ ভাইয়ের নান্দনিক মন্তব্যের ব্যাপারে।Good Luck Good Luck
278178
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৫:০৪
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আগের গুলো পড়া হয়নি। এই পর্বটা ভাল লাগল
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:১০
221986
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ। সময় পেলে আগাএরগুলো পড়ে নেবার অনুরোধ রইলো।
ভালোলাগার অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।Good Luck Good Luck
278228
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:৫৭
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : বেশ সাবলীল গতিতে এগিয়ে চলেছে আপনার এই সিরিজ। ধন্যবাদ Rose Rose Rose
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৩৫
222040
মামুন লিখেছেন : অনুভুতি রেখে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ বোন।Good Luck Good Luck
280106
০১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২১
জোনাকি লিখেছেন : Nice writing! Thumbs Up
০১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২৬
223764
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে।Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File